হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ :

২৫ জুলাই সারাদেশে একযোগে শুরু হওয়া ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ ৯ আগস্ট শেষ হয়েছে। এ ১৬ দিন সারাদেশে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলেছে। ২০ আগস্ট থেকে ২২ অক্টোবর নিবন্ধন চলবে। আগামী বছর ৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে ইসি।
৯ আগস্ট সন্ধ্যায় টেকনাফ উপজেলা নির্বাচন অফিস সুত্রে জানা যায় এবারে উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা এলাকায় ভোটার তালিকা হালনাগাদে ৭২ জন তথ্য সংগ্রহকারীদের কাছে প্রথমে ৫ হাজার ১৫০টি এবং পরবর্তীতে আরও ১ হাজার ৬টি সর্বমোট ৬ হাজার ১৫৬টি ফরম সরবরাহ দেয়া হয়েছিল। ভোটার তালিকা হালনাগাদে তথ্য সংগ্রহের শেষ দিন ৯ আগস্ট সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ৫ হাজার ৯৪৭টি ফরম পুরণ করা হয়েছে। নিবন্ধনের শতকরা হার ৪.১২%। পুরণকৃত ফরমের মধ্যে মোট পুরুষ ৩ হাজার ৪০৮ জন এবং মহিলা ২ হাজার ৫৩৯ জন। টেকনাফ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা বিধায় কঠোর কড়াকড়ির কারণে আনুষাঙ্গিক কাগজপত্রের জটিলতায় সরবরাহকৃত ফরমের মধ্যে ২০৯টি ফরম ফেরৎ দেয়া হয়েছে।
ইউনিয়নওয়ারী পূরণকৃত ফরম হচ্ছে হোয়াইক্যং ১ হাজার ২০৪টি, হ্নীলা ১ হাজার ৩১টি, টেকনাফ সদর ৯৮৩টি, সাবরাং ১ হাজার ২১৫টি, বাহারছড়া ৭৩৮টি, সেন্টমার্টিনদ্বীপ ১৩৭টি, টেকনাফ পৌরসভা ৬৩৯টি। উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা এলাকায় ভোটার তালিকা হালনাগাদের তথ্য সংগ্রহের জন্য ১৭ জন সুপারভাইজার এবং ৭২ জন তথ্য সংগ্রহকারী নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। এরা সকলেই প্রাইমারী ও হাইস্কুলে কর্মরত শিক্ষক। ইউনিয়নওয়ারী হচ্ছে হোয়াইক্যং ৩ জন সুপারভাইজার এবং ১৩ জন তথ্য সংগ্রহকারী, মোট ১৬ জন। হ্নীলায় ৩ জন সুপারভাইজার এবং ১৩ জন তথ্য সংগ্রহকারী, মোট ১৬ জন। টেকনাফ সদরে ৩ জন সুপারভাইজার এবং ১৩ জন তথ্য সংগ্রহকারী, মোট ১৬ জন। সাবরাং ৩ জন সুপারভাইজার এবং ১৪ জন তথ্য সংগ্রহকারী, মোট ১৭ জন। বাহারছড়ায় ২ জন সুপারভাইজার এবং ৯ জন তথ্য সংগ্রহকারী, মোট ১১ জন। সেন্টমার্টিনদ্বীপে ১ জন সুপারভাইজার এবং ২ জন তথ্য সংগ্রহকারী, মোট ৩ জন। টেকনাফ পৌরসভায় ২ জন সুপারভাইজার এবং ৮ জন তথ্য সংগ্রহকারী, মোট ১০ জন।
২৫ জুলাই সারাদেশ ব্যাপী একযোগে শুরু হওয়া ভোটার তালিকা হালনাগাদে মুল কাজ ছিল ৩টি। ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যাদের জন্ম, তাদের তথ্য সংগ্রহ। বিগত হালনাগাদে বিভিন্ন কারণে বাদ পড়াদের অন্তর্ভুক্ত। মৃত ভোটারের বাদ দেয়া।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা ভোটার ঠেকাতে দেশের যেসব এলাকায় রোহিঙ্গা বসবাস করছেন সেসব এলাকার জনগণকে ভোটার হতে হলে তার বাবা-মা, ফুফু, চাচার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেখানো বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। ওই এলাকার জনগণকে ভোটার করার জন্য বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে ৩০টি উপজেলায় বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তম্মধ্যে টেকনাফ উপজেলা অন্যতম। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এসব এলাকায় ভোটার হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে তার বাবা-মা, ফুফু, চাচার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। এর আগে ২০টি উপজেলা ছিল বিশেষ এলাকা। এবার আরও ১০টি উপজেলা চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ৩০টি উপজেলার জন্য বিশেষ কমিটি রয়েছে। রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার প্রবণতা রোধে এসব বিশেষ এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ এলাকার যে কার্য পরিধি আছে, সেখানে কমিটির কাজ নির্ধারিত করা আছে। বিদেশি নাগরিকরা যাতে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে না পারেন, সে বিষয়ে তারা পদক্ষেপ নিতে পারবেন। বিশেষ এলাকায় ভোটার হতে চাইলে কমিটি ভোটারের বাবা-মায়ের আইডি দেখবে, ফুফু-চাচার আইডি দেখবে। এসব না থাকলে বা বিদেশি নাগরিক প্রমাণ পেলে কোনও লোক ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পাদনের জন্য ৭টি পর্যায়ে ৭ ধরনের কমিটি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটি, বিভাগীয় কমিটি, জেলা, উপজেলা, বিশেষ এলাকার জন্য আদালা কমিটি, সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য কমিটি, ক্যান্টনমেন্ট এলাকার জন্য কমিটি।
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত টেকনাফে ভোটার তালিকা হালনাগাদে অর্ন্তভুক্তির জন্য ১৫ কিসিমের কাগজপত্র ফরমের সাথে সংযুক্ত করতে হয়েছে। তা হচ্ছে পিতা-মাতার আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি। পিতা-মাতা মৃত হলে মুত্যু সনদের সত্যায়িত ফটোকপি। স্ত্রী-স্বামীর আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি। স্ত্রী-স্বামী মৃত হলে মৃত্যু সনদের সত্যায়িত ফটোকপি।জন্ম সনদের সত্যায়িত ফটোকপি। জাতীয়তা সনদের সত্যায়িত ফটোকপি। ইউটিলিটি বিদ্যুৎ, টেলিফোন, গ্যাস, পানি ইত্যাদির (যদি থাকে) বিলের সত্যায়িত ফটোকপি। পৌর কর, ইউনিয়ন পরিষদের খাজনা, চৌকিদারের রসিদের সত্যায়িত ফটোকপি। বিদেশ ফেরৎ হলে বৈধ পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি। বসবাসের ক্ষেত্রে নিজ, পিতা, দাদার নামে জমি মালিকানার দলিল-খতিয়ানের সত্যায়িত ফটোকপি। ওয়ারিশ সনদের সত্যায়িত ফটোকপি। নিকট আতœীয় ভাই, বোন, চাচা, ফুফুর আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি। নিকট আতœীয় ভাই, বোন, চাচা, ফুফু জীবিত না থাকলে চেয়ারম্যান কতৃক প্রত্যয়নপত্র। সর্বশেষ ২টি শিক্ষা প্রতিষ্টানের সনদের (যদি থাকে) সত্যায়িত ফটোকপি। বয়স্ক আবেদনকারীর বাদ পড়ার কারণ উল্লেখ করতঃ চেয়ারম্যান কতৃক প্রত্যয়নপত্র।
টেকনাফে বিদ্যমান ভোটার সংখ্যা:
৬টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত টেকনাফ উপজেলার বর্তমান ভোটার সংখ্যা মোট ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ১০ জন। তম্মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭১ হাজার ৬৭৩ জন এবং মহিলা ভোটার ৭১ হাজার ৩৩৭ জন।
ইউনিয়নওয়ারী ভোটার সংখ্যা হচ্ছে হোয়াইক্যং ২৮ হাজার ৩৪ জন। হ্নীলায় ২৪ হাজার ৮৮৫ জন। টেকনাফ সদরে ২৫ হাজার ৯৭১ জন। সাবরাং ২৯ হাজার ৬৪১ জন। বাহারছড়ায় ১৮ হাজার ৭১ জন। সেন্টমার্টিনদ্বীপে ৩ হাজার ৯৪ জন। টেকনাফ পৌরসভায় ১৩ হাজার ৩১৪ জন। ##